এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার ॥
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমা নানা প্রভাব খাঁটিয়ে নিয়োগ, গোপনে টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, বিনা টেন্ডারে সরকারি ওষুধ বিক্রি ও অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন কেলেংকারির ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। সর্বশেষ টেন্ডার নিয়ে পৌনে ২ কোটি টাকার অনিয়ম করা হয়।
এসময় অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রহস্যজনক কোন কার্যকরী পদক্ষেপ এ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত গেল সপ্তাহে শেষ হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন স্থানে চেষ্টা তদবির অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
সুত্রে জানা যায়, জেলা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা ডাঃ পুচনো সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের পর একই অফিসে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কর্মরত সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমা মিলে সিভিল সার্জন অফিসে একের পর এক নিয়োগ, গোপনে টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, বিনা টেন্ডারে সরকারি ওষুধ বিক্রি ও অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন কেলেংকারির ঘটিয়ে আসছে।
সর্বশেষ চলতি বছর ১৫ মে এমএসআর ও ১৮ মে গ্যাভি টেন্ডার নিয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো বিনা টেন্ডারে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার গ্যাভি, ৬২ লাখ টাকার এমএসআর প্রকল্প ‘মায়ের দোয়া’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাড দেখিয়ে উল্লেখিত টেন্ডার সম্পন্ন করেন।
এছাড়াও সিভিল সার্জন অফিসে গত অর্থবছরে বিনা টেন্ডারে যন্ত্রপাতি, লিলেন আসবাবপত্র, গজ-ব্যান্ডেজ, বিএজেন্ট (ক্যামিকেল) ইত্যাদি ক্রয় করা হয়। এই খাতে মন্ত্রণালয় থেকে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৮৯ লাখ ৩১ হাজার ৯২৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলে এতেও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয় বলে অভিযোগ।
গত ৭ জুন সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনোর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কমিটি। তদন্ত টিমের সদস্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও চট্টগ্রাম হিসাব রক্ষক সরাসরি কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এসব গোপন বানিজ্যে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে,সিভিল সার্জন অফিস কেন্দ্রি রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে, খোদ সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমা, তাপস কুমার বড়ুয়া, অংচাপ্রু, ইমংপ্রু (বিশ্ব স্বাস্থ্যের কর্মকর্তা)। সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমা জেলায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মশালা জনসচেতনতামুলক কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও তিনি মাঠে যান না। অফিসে বসেই বিল ভাউচার তৈরি করে এখাতে বরাদ্দ হওয়া লাখ লাখ টাকা ভাগভাটোয়া করে আত্মাসাৎ করে আসছে। এছাড়া অফিসেই সার্বক্ষনিক সক্রিয় থাকেন টেন্ডার বাণিজ্যে।
দুর্নীতিবাজ সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনোর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সন্ধান পেয়েছি বলে স্বীকার করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক উপ-পরিচালক। এবিষয়ে জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলার আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসকদের মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। সিভিল সার্জনের অদৃশ্য হাতের ইশারায় সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করা নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমাসহ অন্যান্যদের নিয়ে গঠিতত সিন্ডিকেটে লাখ লাখ টাকার টেন্ডার বাণিজ্য ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছেন অফিসেরই একাধিক কর্মচারী। সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানো ও উচাপ্রু মারমা নানা প্রভাব খাঁটিয়ে নিয়োগ, গোপনে টেন্ডার বানিজ্য, বদলি বানিজ্য, বিনা টেন্ডারে অবৈধভাবে সরকারি ওষুধ বিক্রি ও অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন কেলেংকারির বিষয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রহস্যজনক কারণে এসব তদন্তে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু বিরুদ্ধে। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে একই স্থানে কর্মরত এই উচাপ্রুসহ বেশ কয়েকজন চিহ্নিত কর্মচারী সরকারী এই জনহিতকর অফিসকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে।
অভিযোগে জানাযায়, সরকারী টেন্ডারে বিধি বিধান থাকলেও কুল টেইন টেকনিশিয়ান পদস্থ সামান্য কর্মচারী তাপস কুমার বড়ুয়ার মাধ্যমে গ্যাভি টেন্ডার প্রক্রিয়াদি সম্পন্ন করে অত্যন্ত গোপনে। এই অফিস ছাড়া দেশের কোন সিভিল সার্জন অফিসে হয়েছে এমন নজির নেই।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, টেন্ডারের বিধি মোতাবেক হিসাব শাখায় সব কাজ সম্পন্ন করেন ও হিসাব রাখেন। কিন্তু কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে ঘটে আসছে তার উল্টো চিত্র। নিয়ম অনুযায়ী সিভিল সার্জনের হিসাব শাখায় সকল হিসাব,তথ্য উপাত্ত,সিডিউল দেয়া ও নেয়া টেন্ডার বিষয়ে সকল কোডের হিসাব রাখার বিধান থাকলেও সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব শাখা কিছুই জানেন না। এমনকি রহস্যজনক কারনে হিসাব শাখায় কোন তথ্য সংরক্ষণও নেই। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন ট্রেনিং এর ভাতা ও খরচ বাবদ বিবিধ ৮ লাখ টাকা খরচের কোন তথ্য নেই। এর নেপথ্যে কারন হিসাবে জানাগেছে, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমা সরাসরি হিসাব শাখার বিনা হিসাবে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে চেক পাশ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দীর্ঘ ১২ বছর।
অভিযোগ রয়েছে, পুরো সিভিল সার্জন অফিসের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে উচাপ্রু মারমা। কোন সিভিল সার্জন তার আয়ত্বে না আসলে তাকে নানা কৌশলে ফাঁসিয়ে দেয় পুরো সিন্ডিকেট। ধারাবাহিকতায় সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন,ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ মহি উদ্দিন আলমগীরকে নাজেহাল করে ফাঁসিয়ে দেয় উক্ত সিন্ডিকেট।
এব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী অনিয়ম তদন্তের কথা স্বীকার করে জানান,নানা অসংগতির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদস্যদের তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তড়িগড়ি করে সরকারের উচ্চমহলে তা ধামাচাপা দিতে সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও জানাযায়।
এব্যাপারে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিভাগীয় তদন্ত টিম সিভিল সার্জন অফিসে নিয়ম মাফিক কাজ তদারকি করার জন্য এসেছিলেন। কোন অনিয়ম তদন্তে আসেননি বলে দাবী করেন।
[/highlight]
পাঠকের মতামত: